পৃথিবীর আধুনিকায়ন আর অভূতপূর্ব বিকাশে সবথেকে বেশি অবদান বিজ্ঞানের । বিজ্ঞানের কল্যাণে আজকের এই পৃথিবী । যে সকল বিজ্ঞানীদের হাত ধরে পৃথিবী আজকের এই অবস্থায় এসেছে তাদের সম্পর্কে আপনাদের কাছে জানতে চাইলে চটপট আপনি বলে ফেলবেন আলবার্ট আইনস্টাইন , স্যার আইজ্যাক নিউটন, টমাস আলভা এডিসন, লুই পাস্তুর কিংবা গ্রাহাম বেল এর নাম । কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সূচনালগ্নে রয়েছেন কয়েকজন মুসলমান বিজ্ঞানী । যাদের নাম আমরা অনেকেই জানিনা । কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় মুসলিম বিজ্ঞানীরা কখন কম যাননি । তারা তাদের মেধা শ্রম ও মননের মাধ্যমে নিজেদেরকে পৃথিবীতে অমর করে রেখেছেন । চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে।
১. জাবির ইবনে হাইয়ান : মুসলিম বিশ্বের সবথেকে আলোচিত বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ান । তাঁর অসামান্য অবদানের কারণে তাকে রসায়ন শাস্ত্রের জনক বলা হয়। 720 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করা এই মহামানব প্রায় 500 এর মত বই রচনা করেছেন । যেগুলো বিশ্বের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়ন করানো হয় । তিনি 815 খ্রিষ্টাব্দের ইন্তেকাল করেন ।
২. মুসা আল খোয়ারিজমি: মুসা আল খোয়ারিজমী 780 খ্রীষ্টাব্দে ইরাকে জন্মানো মুসলিম মনীষী। তিনি বীজগণিতের আবিষ্কারক ।তাঁকে গণিত শাস্ত্রের জনকও বলা হয়। ঋণাত্মক চিহ্ন পরিবর্তন করে সমীকরণ সমাধান করার পদ্ধতি তিনি প্রথম প্রবর্তন করেন । এছাড়াও তিনি সমীকরণ সমাধান করার জন্য 6 টি নিয়ম চালু করেন । তিনি গণিতশাস্ত্রে অসংখ্য বই রচনা করেছেন যেগুলো পরবর্তী গণিতের পণ্ডিতেরা ব্যবহার করেছেন। 850 খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিভাবান গণিতবিদের মৃত্যু হয়।
৩. হাসান ইবনে হাইসাম : তিনি 965 খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। দর্শন, জ্যোতির্বিজ্ঞান, আর চিকিৎসা শাস্ত্রে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। এই শাস্ত্রের উপর তিনি শতাধিক বই রচনা করে গেছেন । যেগুলো দর্শন ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে যুগ যুগ ধরে অধ্যায়ন করা হচ্ছে। 'কিতাবুল মানাযির' তাঁর লেখা চক্ষু বিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থ । বস্তু থেকে আমাদের চোখে আলো আসে এই তথ্য প্রমাণ করে দিয়ে তিনি ইউক্লিড আর টলেমির থিওরি ভুল প্রমাণিত করেন। এছাড়াও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আদি আবিষ্কারক হিসেবে তাঁকে মনে করা হয় । তিনি 1040 খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
৪. ইবনে সিনা: তিনি 980 খ্রিস্টাব্দে বুখারা নামক নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র 10 বছর বয়সে পবিত্র কুরআন হিফজ করেন। এই মুসলিম বিজ্ঞানী একাধারে ছিলেন দার্শনিক, চিকিৎসক,গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ। তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে অসংখ্য বই রচনা করেছেন। 'আল কানুন ফিত তিবব' চিকিৎসাশাস্ত্রের তার রচিত গ্রন্থ। এটি চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইবেল নামেও পরিচিত । তিনি 1037 খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
৫. আল বিরুনি: এই মুসলিম বিজ্ঞানী 973 খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁকে মধ্যযুগীয় শ্রেষ্ঠ পন্ডিত বলা হয়। বিজ্ঞানের নানা শাখায় তাঁর অবদান রয়েছে। গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান , পদার্থবিজ্ঞান , রসায়ন , ভূগোল প্রায় সব শাখায় তিনি বিশ্লেষণমূলক ভূমিকা রাখেন । তাঁর স্বাধীনচেতা ও মুক্তবুদ্ধি এবং সাহসিকতায় তিনি শ্রেষ্ঠ পন্ডিত হিসেবে স্বীকৃতি পান। তিনি প্রথম প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে পৃথিবী গোলাকার। পৃথিবীর গোলাকার মানচিত্রও তাঁরই আবিষ্কার ।1048 খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন
Comments
Post a Comment